প্রশ্ন:- খিলাফৎ আন্দোলন সমন্ধে লেখ ।

প্রশ্ন:- খিলাফৎ আন্দোলন সমন্ধে লেখ ।

ভূমিকা:- “তুরষ্কের সুলতান বা খলিফার মর্যাদার প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই ভাবতবর্ষে খিলাফৎ আন্দোলনের সূত্রপাত । অধ্যাপক ক্যানেথ ম্যাকফার্সন একে উর্দুভাষি মুসলমানদের সত্ত্বাসংকট প্রসৃত বলে ব্যাখ্যা করেছেন। অধ্যাপক গেইল মিনোল্ট এর মতে, বিভিন্ন মুসলিম নেতার -ব্যক্তিগত উদ্যেশ্য বিভিন্ন হলেও এর একটা সুস্পষ্ট জাতীয় তাবাদী দিক ছিল। আবার AC নিমিজার্ব -এর “pan-Islamic” দিকটির ওপর জোড দিয়েছেন। অধ্যাপক মুশিরুল হাসানও খিলাফৎ আন্দোলনে মুসলমান সংহতির ধারনার দিকে আমাদের দৃষ্টি আর্কষন করেছেন। মুশিরুল হাসানের মতে, এই ধারনার ওপর জোড় দিয়ে খিলাফত নেতারা পরবর্তী পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক মতাদর্শ ও রাজনীতির শক্তি বৃদ্ধির সুযোগ করেদিয়েছিলেন।

⇒ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরষ্ক জার্মানির পক্ষ অবলম্বন করে ইংল্যান্ডের নেতৃত্বাধীন শক্তি জোটের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর তুরষ্কের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। ১৯২০-এর মে মাসে তুরষ্কের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সেভর চুক্তি থেকে স্পষ্ঠ হয়ে যায়। তুর্কি সাম্রাজ্য ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তুরস্কের খলিফাকে মুসলমানেরা ধর্ম গুরু বলে মনে করতেন। খলিফার অবমাননার বিরুদ্ধে সমগ্র মুসলিম জগতে আন্দোলন শুরু -হয়।

ভারত বর্ষে এই আন্দোলন শুরু করে ১৯১৯ খ্রীঃ মার্চ -মাসে বোম্বেতে গঠিত খিলাফত কমিটি। আন্দোলনে তিনটি দাবি পেশ করা হয়, যথা— প্রথমত:-মুসলমানদের সমস্ত পবিত্র স্থানের ওপর খলিফার নিয়ন্ত্রন অবশ্যই বজায় থাকবে। দ্বিতীয়তঃ- যুদ্ধের পূর্বে যতটা এলাকা ছিল ঠিক ততটাই এলাকা যেন খলিফার থাকে। তৃতীয়তঃ- “-জাজিরাৎ-উল আরব (আরব, সিরিয়া, ইরাক, পেলেস্তাইন) কখনই অমুসলিমদের সার্বোভৌমত্বের অধিনে থাকবেনা।

⇒ -আপত ভাবে খিলাফত আন্দোলন আগাগোড়া ইসলামিক আন্দোলন ছিল এবং এর মূল উদ্যেশ্যের সঙ্গে ভারতের কোনো জোট ছিলনা। কিন্তু গেইল মিনোল্ট দেখিয়েছেন যে, খিলাফৎ প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছিল মাত্র। মধ্য প্রাচ্যে রাজনৈতিক বাস্তব পরিস্থিতিকে বদলানোর কোনো চিন্তাই নেতাদের মাথায় ছিলনা, ভাষাগত, আঞ্চলগত, শ্রেণী গত, সম্প্রদায় গত ইত্যাদি বহুধা বিভক্ত ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়কে এই প্রতীকের ছত্রছায়ায় ঐক্যবদ্ধ করা হয়। মিনোল্ট এর ভাষায়: “A pan- Islamic symbol open the Way to pan- Islamic political mobilization”. খিলাফৎ আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ বিরোধী। তাই গান্ধিজী খিলাফতের বিষয়টিকে সমর্থন করতে অনুপ্রানীত হয়েছিলেন। তার উদ্যেশ্য ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সঙ্গে যুক্ত করা।

⇒-অধ্যাপক শেখর বন্দোপাধ্যায় দেখিয়েছেন, প্রমম দিকে খিলাফৎ আন্দোলনের দুটি প্রধান ধারা ছিল। প্রথমটি হল- নরমপন্থি ধারা, যার পুরোধা ছিলেন বোম্বাইয়ের ব্যাবসায়ী। দ্বিতীয়টি ছিল- চড়ম পন্থি ধারা, যার পরিচালনায় ছিলেন মহমমদ আলি, সৌকত আলি, মৌলানা আব্দুল কালাম আজাদের মতো মুসলমান নেতা এবং উলেমারা। ১৯২০ সালে সেভরের চুক্তির পর আন্দোলনের নেতৃত্ব চলে যায় চড়ম পন্থিদের হাতে। ১৯২০ সালে জুন মাসে কেন্দ্রিয় খিলাফৎ কমিটির এলাহবাদ সম্মেলনে চারটি পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়- উপাধি বর্জন; সরকারের বেসামরিক পদগুলি থেকে ইস্তফা দেওয়া, পুলিশ ও সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করা, কর না দেওয়া এই কর্মসুচী গুলিকে রুপায়ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় গান্ধীজি, আজাদ, কিচলু ও আলি ভাতৃদ্বয়ের ওপর। ১৯২০ খ্রীঃ ১লা আগস্ট সারাদেশ ব্যাপি সাধারন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে গান্ধিজীর চাপে খিলাফৎ আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত হয়েগিয়েছিল।

⇒ অধ্যাপক বিপান চন্দ্র মন্তব্য করেছেন, The Khilafat movement resulted in raising the national, anti imperialist consciousness of Muslim masses and middle classes.” কিন্তু ক্রমশ খিলাফত আন্দোলন তার গুরুত্ব হারাতে থাকে। আন্দোলনের মধ্যে হিংসা প্রবেশ করে। ধর্মীয় প্রতীক সরাসরি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। হিন্দু মুসলিম মৈত্রীর মধ্যে ভাঙ্গন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অবশেষে ১৯২৪ খ্রীঃ তুরষ্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে রাজতন্ত্রের উচ্ছেদের সাথে খিলাফৎ আন্দোলন তাৎপর্য হারায়।

⇒ অধ্যাপক বিপান চন্দ্র The Khilafat leaders made appeals to religion. তারা ফতোয়া ও অন্যান্য ধর্মীয় বিধানকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন। ফলে তারা মুসলিম জনতার মনের ওপর গোড়া মুসলমান ও মোল্যাদের আধিপত্য বাড়িয়েছিলেন, উৎসাহ করেছিলেন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে রাজনৈতীক বিষয় গুলিকে দেখার অভ্যাস কে । অমলেশ ত্রিপাঠিও মনে করেন, pan Islamic মতবাদের অবসম্ভাবি মুসলিম পরিনতি ছিল মুসলিম পরিণতাবাদ চরমপন্থি আন্দোলন কালে হিন্দুদের যে মিথ্যা আত্মাভিমান জমেছিল খিলাফৎ আন্দোলন যে মুসলিম মুকুরে তারই প্রতিবিম্ব ।

FAQ:-

১. খিলাফত শব্দের আভিধানিক অর্থ কি ?

উত্তর:- উত্তরাধিকারী ।

২. সেভরি চুক্তি কবে হয় ?

উত্তর:- ১৯২০ সালের ১৪ মে ।

৩. ‘আঞ্জুমান-ই-খুদ্দাম ই কাবা’ নামক সংগঠনটি কে কবে তৈরি করেন?

উত্তর:- ১৯১৩ সালে মৌলানা আব্দুল বারী ও তার দুই শিষ্য মাওলানা শওকত আলি ও মৌলানা মোহাম্মদ আলী ।

৪. নজরাতুল মারিফ কোথায় কে গড়ে তোলেন?

উত্তর:- দিল্লিতে মৌলানা ওবেদুল্লা সিন্ধ্রি্ ।

৫. কবে কোথায় মজলিস-ই-খিলাফত গড়ে ওঠে ?

উত্তর:-১৯১৯ সালে মুম্বাই শহরে ।

৬. খিলাফত দিবস কবে পালন করা হয় ?

উত্তর:- ১৯১৯ সালের ১৭ই অক্টোবর ।

৭. কবে কোথায় সর্বভারতীয় খিলাফৎ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন বসে ?

উত্তর:- ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে নভেম্বর ।

Get Update by Telegram! Get Update by WhatsApp!