শিবাজীর শাসনব্যবস্থা

শিবাজীর শাসনব্যবস্থা মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ছত্রপতি শিবাজি। তাঁর শাসনব্যবস্থা মধ্যযুগের এক বিস্ময়। শাসনব্যবস্থায় তিনি মৌলিক চিন্তার পরিচয় দিয়েছেন। আপন দক্ষতা ও যোগ্যতা বলে যে শাসনব্যবস্থা তিনি প্রবর্তন করেন তা আজও ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। “He was the friend of the poor and downtrodden”.

** অষ্টপ্রধান: শিবাজি অষ্টপ্রধান দ্বারা শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। অষ্ট প্রধানের প্রধানকে বলা হত পেশোয়া বা প্রধানমন্ত্রী। অন্যান্যরা হলেন অমাত্য বা রাজস্বমন্ত্রী, সামন্ত বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিব বা সরকারি পদের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী, পণ্ডিতরাও বা ধর্মাধ্যক্ষ, ন্যায়াধীশ বা প্রধান বিচারপতি, সেনাপতি বা সামরিক বিভাগের প্রধান। সুমন্ত বা বিদেশ মন্ত্রী। এই অষ্টপ্রধানদের ‘রাজমণ্ডল’-ও বলা হত।

**প্রাদেশিক শাসন: সুশাসনের জন্য শিবাজি তাঁর সমগ্র রাজ্যকে দু-ভাগে ভাগ করেন। স্বরাজ্য (প্রত্যক্ষ শাসনাধীন) ও মুলকাগিরি (নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল)। স্বরাজ্য অঞ্চলকে প্রদেশে, প্রদেশগুলিকে কতকগুলি পরগনা ও পরগণাগুলিকে আবার কতকগুলি গ্রামে ভাগ করেন। গ্রাম ছিল সর্ব নিম্নস্তর। প্রদেশের শাসন কর্তাকে বলা হত মামলাতদাব। গ্রামের শাসন কর্তাকে গ্রাম প্রধান বলা হত।

** রাজস্ব : শিবাজি জমি জরিপ করে উৎপন্ন শস্যের ৪০% রাজস্ব হিসাবে আদায় করতেন। তিনি অন্য সমস্ত কর তুলে দেন। শিবাজি মোগল অধিকৃত অঞ্চল থেকে ফসলের ১/৪ অংশ ‘চৌথ’ হিসাবে এবং ফসলের ১/১০ অংশ ‘সরদেশমুখী’ হিসাবে আদায় করতেন।

**সামরিক বাহিনী: শিবাজির মূল শক্তি ছিল সামরিক বাহিনী, তাঁর সামরিক বাহিনীতে পদাতিক, অশ্বারোহী, নৌবাহিনী, হস্তী বাহিনী, এমনকি গোলন্দাজ বাহিনীও ছিল। তাঁর অশ্বারোহী বাহিনী ‘বর্গি’ ও ‘শিলাদার’ এই দু-ভাগে বিভক্ত ছিল। শিলাদাররা স্থায়ী সৈন্য, তাদের রাজ্য থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও বেতন দেওয়া হত। আর ভাড়াটে সৈনদের বলা হত বর্গি। সেনাবাহিনীর নিয়ম শৃঙ্খলা ছিল কঠোর। সেনা শিবিরে নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। সামরিক আইনভঙ্গের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড।

** বিচারব্যবস্থা: বিচার ব্যবস্থায় রাজাই ছিলেন সর্বেসর্বা। এছাড়া প্রতি প্রদেশে বিচারালয় থাকত। বিচারের দণ্ড ছিল কঠোর।

তবে শিবাজির শাসনব্যবস্থায় কিছু ত্রুটি চোখে পড়ে। নৌসেনা ছিল না, পেশোয়া ও অষ্ট প্রধান ছিল ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া।

**মূল্যায়ন: সামরিক, রাজস্ব ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শিবাজি ছিলেন সপ্তদশ শতকের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। সমকালীন মুসলিম ঐতিহাসিকরা তাঁকে ‘প্রতারণার জনক’, ‘নরকের কুকুর’ বলে অভিহিত করেছেন। মারাঠারা তাঁকে ‘মহামানব’ ও দেবদূত হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। Jadunath Sarkar-এর মতে- “Shivaji was not only the maker of the Maratha nation, but also the greatest constructive genius of medieval India.”

Leave a Comment