সুলতানি যুগের স্থাপত্য শিল্প

সুলতানি যুগের স্থাপত্য শিল্প : ভারতীয় স্থাপত্য রীতির সঙ্গে ইসলামীয় স্থাপত্য রীতির সংমিশ্রণে সুলতানি আমলে যে নতুন শিল্পধারা গড়ে উঠেছিল, পন্ডিতেরা তাকে ইন্দো-ইসলামীয় স্থাপত্য শৈলী বলে থাকেন। এই যুগের স্থাপত্য শিল্পে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়- 

(১) খিলান ও গম্বুজের প্রচলন শুরু হয়। (২) কাদার গাঁথনির পরিবর্তে চুন সুরকির ব্যবহার শুরু হয়। 

(৩) লাল বেলে পাথরের প্রচলন শুরু হয়। (৪) দেওয়ালে কোরানের বাণী লিপিবদ্ধ হয়।

**কুতুবউদ্দিন আইবকের আমলে সুলতানি যুগের স্থাপত্য শিল্পের সূচনা হয়। তাঁর আমলে বিখ্যাত স্থাপত্য হল দিল্লির ‘কুয়াত-উল-ইসলাম’ মসজিদ। আজমিরের আড়াই-দিনকা-ঝোপড়া’ প্রাসাদ, সুফি সাধক খাজা কুতুবউদ্দিন বখতিয়াব কাকির স্মৃতি রক্ষার্থে ২২৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ‘কুতুবমিনার’। কুতুবউদ্দিন আইবক কুতুবমিনারের কাজ শুরু করলেও শেষ করেন ইলতুতমিস।

**খলজি আমলে আলাউদ্দিন খলজি কুতুবমিনার চত্বরে নির্মাণ করেন ‘আলাই দরওয়াজা’ যা “Treasuredom of Islamic architecture” হিসাবে স্বীকৃত। তিন হাজার স্তম্ভ বিশিষ্ট মনোরম প্রাসাদ নির্মাণ করেন এবং নির্মাণ করে জামাইত-খানা-মসজিদ’।

গিয়াসউদ্দিন তুঘলক যমুনা নদীর তীরে নির্মাণ করেন ‘তুঘলকা বাদুশাহর’। মহম্মদ-বিন-তুঘলক নির্মাণ করেন ‘জাহানপনাহ’ নগর এবং ‘দৌলতাবাদ’ শহর। ফিরোজশাহ তুঘলক নির্মাণ করেছিলেন ‘ফিরোজাবাদ শহর’। এখানেই বিখ্যাত প্রাসাদ দুর্গ ফিরোজশাহ কোটলা, এ ছাড়া বহু সরাইখানা, মসজিদ, সমাধিক্ষেত্র নির্মাণ করেন।

**সুলতানি যুগের পতনের পর বাংলার পান্ডুয়ায় আদিনা মসজিদ, ছোটো সোনা মসজিদ, এক লাখি মসজিদ, কদম রসুল, বড়োসোনা মসজিদ প্রভৃতি বঙ্গীয় রীতিতে নির্মিত হয়। তা ছাড়া জৌনপুরে জামা মসজিদ, লাল দরওয়াজা মসজিদ বিখ্যাত ছিল। গুজরাটের সুলতান আহমদ শাহ্ নিজ নামে আহমেদাবাদ শহরের পত্তন করেন। দক্ষিণী রীতির দ্বারা গুলবর্গার জামি মসজিদ জাঞ্জিরি মসজিদ ও চারমিনার গড়ে ওঠে।

Leave a Comment