অসহযোগ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও গুরুত্ব
অসহযোগ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য: ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। গান্ধিজিকে এই আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যগুলি পরিপূরণের জন্য অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন–
(১) দমনমূলক আইনগুলি, বিশেষ ভাবে কুখ্যাত রাওলাট আইনের বিরোধিতা করা।
(২) খিলাফৎ সমস্যার যথাযথ সমাধানের দাবি জানানো।
(৩) এক বছরের মধ্যে স্বরাজ অর্জন করা এবং
(৪) জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানানো।
সংক্ষেপে বলা যায় যে, সম্পূর্ণ অহিংস পদ্ধতিতে সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করে ভারতে ব্রিটিশ শাসন করে দেওয়াই ছিল ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের অসহযোগ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।
- জুনাগড় সমস্যা
- কেশবচন্দ্র সেন ও ব্রাহ্মসমাজ
- অসহযোগ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও গুরুত্ব
- ইংরেজদের সঙ্গে সিরাজের বিরোধের কারণ
- চুয়ার ও পিন্ডারী বিদ্রোহ
** অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব: আপাতদৃষ্টিতে অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ মনে হলেও এই আন্দোলনের ইতিবাচক দিক’ও ছিল যথেষ্ট, যেমন–
(১) এই আন্দোলন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, কারণ এই আন্দোলন জনগণের মধ্যে স্বাধীনতা-স্পৃহা ও রাজনৈতিক চেতনা এবং আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করে। বস্তুতপক্ষে অসহযোগ আন্দোলনের ফলেই ভারতীয় স্বাধীনতা-সংগ্রাম প্রকৃত গণ-আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়।
(২) অসহযোগ আন্দোলনের ফলে জাতীয় কংগ্রেস সংগঠনের প্রভাব ও শক্তি বৃদ্ধি ঘটে। এমনকি কংগ্রেসের শাখাপ্রশাখা সুদূর গ্রামাঞ্চলেও বিস্তৃত হয়।
(৩) দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এই আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল, কারণ এর প্রভাবে খাদি বস্তু ও দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটে। অন্যদিকে সরকারের শুল্ক আদায়ের পরিমাণ হ্রাস পায়।
(৪) অসহযোগ আন্দোলনের সামাজিক গুরুত্বও কম ছিল না। কারণ এই আন্দোলন জাতপাতের সামাজিক বেড়া ভেঙে দিয়ে অনগ্রসর শ্রেণির মানুষকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
(৫) এই আন্দোলনের ফলে সরকার ও প্রশাসনযন্ত্রের ওপর জনগণের বিশ্বাস ও ভীতি বিনষ্ট হয়ে যায়। সরকারি দমননীতি জনগণের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস ভাঙতে ব্যর্থ হয়।
**অসহযোগ আন্দোলনের সার্বিক বিশ্লেষণের পরে-এই আন্দোলন সফল না ব্যর্থ, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতে। মতপার্থক্য রয়েছে। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, এই আন্দোলন কিছুটা সফল ও কিছুটা ব্যর্থ হয়েছিল। অন্যদিকে, ঐতিহাসিক ডঃ তারাচাঁদ মনে করেন, ‘গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনের লক্ষ্য নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধন ছিল না। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল সত্য ও অহিংসার মহান আদর্শের ওপর ভিত্তি করে শোষণহীন বৈকমামুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা।’