জুনাগড় সমস্যা

জুনাগড় সমস্যা :কাথিওয়াড় উপদ্বীপে অবস্থিত জুনাগড় নামে দেশীয় রাজ্যটি আয়তনে ছোটো হলেও এর অবস্থানগত গুরুত্ব যথেষ্ট ছিল। প্রাচীনকাল থেকে গুজরাটে কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের বন্দর থাকায় এই অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের যথেষ্ট সুযোগ ছিল। কাথিওয়াড়ের অন্যান্য দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে জুনাগড় রাজ্যের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য ছিল। এটি একটি ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। সুদূর অতীতে প্রসিদ্ধ শক্ রাজা রুদ্রদামনের রাজধানী ছিল এবং ইতিহাস প্রসিদ্ধ রুদ্রদামনের জুনাগড় লিপিতে এর ঐতিহ্যময় অতীতের কথা লিপিবদ্ধ আছে। মধ্য যুগের দিল্লী সুলতানী আমলে জুনাগড় একটি অত্যন্ত সম্পদশালী স্বাধীন রাজ্য ছিল। জুনাগড়ের প্রাচীন দূর্গ এখনও তার অতীত ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে।

**জুনাগড়ের রাজা মুসলিম, কিন্তু তার ৮০ শতাংশ প্রজা ছিল হিন্দু। এতদসত্বেও এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় ছিল। কিন্তু রাজ্যের দেওয়ান স্যার শাহনওয়াজ ভুট্টো মুসলিম লিগের সমর্থক হওয়ায় ভারতে না থেকে পাকিস্তানে যোগদানের জন্য জুনাগড়ের নবাবের উপর প্রভাব বিস্তার করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এতে রাজ্যের ভিতরে এবং বাইরে প্রচন্ড বিক্ষোভ শুরু হয়। ইতিমধ্যে কাথিওয়াড়ের অন্যান্য দেশীয় রাজ্যগুলি ভারত ডোমিনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এঁরা সকলে মিলে ভারত সরকারের কাছে জুনাগড়ে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানায়। স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। তারা তাদের সভাপতি সামালদাস গান্ধির নেতৃত্বে বোম্বের এক সভায় অস্থায়ী সরকার গঠন করেন। সামালদাস গান্ধি দলবল নিয়ে জুনাগড়ে পৌঁছালে স্থানীয় জনগণ তাঁকে বিপুল সম্বর্ধনা দেয়। পূর্বতন শাসক উদ্ভুত পরিস্থিতি ন মোকাবিলা করার কোনো রকম চেষ্টা না করে সপরিবারে করাচীতে পালিয়ে যান। কিন্তু দেওয়ান স্যার শাহনওয়াজ ভুট্টো পরিস্থিতির মোকাবিলা করার প্রয়াস নেন। ইতিমধ্যে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নির্দেশে ভারতীয় সেনাবাহিনী জুনাগড়ে প্রবেশ করে। এই অবস্থায় দেওয়ান নিরুপায় হয়ে পাকিস্তানের সাহায্য চান। পাকিস্তান থেকে সাহায্য না আসায় দেওয়ান জুনাগড় ছাড়তে বাধ্য হন। ১৯৪৮ খ্রিঃ২০ ফেব্রুয়ারি  অনুষ্ঠিত গণভোটের মাধ্যমে রাজ্যের বিপুল সংখ্যক মানুষ ভারতে যোগদানের পক্ষে মত দেয়। জানুয়ারি ১৯৪৯ খ্রিঃ রাজ্যটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

Leave a Comment